যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যে রয়েছে অনেক আলোচনা – সমালোচনা। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য মার্কিন যূক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অনেক গূরুত্বপূর্ণ । বাংলাদেশ ,মার্কিন যূক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন নিয়ে আমাদের মধ্যে কল্পনা-জল্পনার শেষ নেই।
যূক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শপথ গ্রহণ করে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার শাসনামলে তিনি America first নীতিতে চলেন। ট্রাম্প প্রশাসন বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চূক্তি এড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চূক্তির প্রতি জোর দেয় বেশি।মার্কিন যূক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্কনীতি চালু করবে যাতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা বলা হতে পারে । এটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে ।এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতামূলক পণ্য সরবরাহ করতে হবে।চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের পরিমাণ আরো বাড়াতে পারে মার্কিন যূক্ত্ররাষ্ট্র।এর পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ কিংবা এর বেশিও হতে পারে।এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে পারে। তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানিতে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান আর যূক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।গত ১০ বছর ধরে এই অবস্থান ধরে রেখেছে যূক্তরাষ্ট্র।এই তথ্যটি যূক্ত্ররাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এডমিনিস্ট্রেশনের অফিস অব টেক্সটাইল এন্ড এ্যাপারেল (ওটিইএক্সএ) তে উঠে এসেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসী নীতির প্রভাব পরবে বাংলাদেশের উপর।মার্কিন যূক্তরাষ্ট্রে প্রায় আড়াই লাখ অভিবাসী বাংলাদেশী বাস করে। এসব অভিবাসীরা বিশাল একটা রেমিট্যান্স পাঠায় বাংলাদেশে ।ট্রাম্পের অভিবাসী নীতির ফলে এক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হবে।তাছাড়াও H -1B ভিসা সীমিতকরণ করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন ,যা বাংলাদেশী অভিবাসীদের যূক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ সীমিত করতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনে যূক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ও রাজনৈতিক প্রতিযোগীতা তীব্র হয়।চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ যূক্ত্ররাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে।এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চীন-মার্কিন বিরোধে সরাসরি কোন পক্ষ থেকে বিরত থাকা উচিত।তাছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে ভারতমুখী কূটনীতি দেখা যায়।তাই মার্কিন যূক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে হলে বাংলাদেশকে ভারতের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে।গত ৩১ অক্টোবর ২০২৪ সালে ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স তে মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশের হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে।বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত হওয়া নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন প্যারিস জলবায়ু চূক্তি থেকে বের হয়ে আসে যা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রবাহ কমাতে পারে।বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে।মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড বাংলাদেশকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সহায়তা করে থাকে যা ট্রাম্প প্রসাশনের শাসনামলে কমে যেতে পারে
ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বাংলাদেশের উচিত কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখা ।এক্ষেত্রে নতুন সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। অভিবাসন নীতি,বাণিজ্য,আন্তর্জাতিক সাহায্য ,জলবায়ু পরিবর্তন এসব ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের উপর।এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতিমালা সহজ এবং যূক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশি বাজার উন্মূক্ত করতে হবে।চীন -মার্কিন বিরোধে সরাসরি কোন একপক্ষীয় অবস্থান না নিয়ে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।এক্ষেত্রে চীন ,ভারত এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাই হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
মারদিয়া ইসলাম খেয়া
শিক্ষার্থী,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়